গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি মার্কেটের ভেতর প্রকাশ্যে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
নিহত সাংবাদিকের নাম আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮)। তিনি প্রতিদিনের কাগজ নামের একটি দৈনিক পত্রিকার গাজীপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জানা গেছে, আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
কুপিয়ে হত্যার আগে তুহিন চান্দনা চৌরাস্তার মসজিদ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নিচে নামতেই দেখেন কয়েকজন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার সামনে দিয়ে টাঙ্গাইল মহাসড়কের দিকে যাচ্ছিলো, এসময় সাংবাদিক তুহিন তাদের পিছু নেয়, শাপলা ম্যানশনের সামনে যায় সন্ত্রাসীরা, একজন নারীকে আক্রমণ করে বাদশন নামক একব্যক্তি, সেই সময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বাদশা কে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে, তখন সাংবাদিক তুহিন ভিডিও করতে গেলে সন্ত্রাসীরা বাধা দেয় এবং ভিডিও ডিলিট করতে বলেন। ভিডিও ডিলিট করতে রাজি ছিলেন না সাংবাদিক তুহিন, সেখান থেকে চলে আসেন এবং মসজিদ মার্কেটে একটি চা দোকানে প্রবেশ করে, সন্ত্রাসীরা চা দোকানে ঢুকেন ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কোপাতে গেলে চা দোকানদার বাধা দেয়, সন্ত্রাসীরা দোকানদারকে গালাগালি করে ধমক দিলে সে চুপ করে বসে পরে, এই সময় সন্ত্রাসীরা তুহিনকে টেনে বের করে লোকজনের সামনেই তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে দ্রুত চলে যায়। পরে খবর পেয়ে বাসন থানা পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করেছে। ঘটনার পর এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় তুহিন মসজিদ মার্কেটের সামনে একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন। হঠাৎ কয়েকজন সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র নিয়ে দ্রুতগতিতে এসে তুহিনকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে। পরে তারা এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। উপস্থিত লোকজনের সামনেই তাঁকে কুপিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। কিন্তু ভয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি।
এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, যেখানে তুহিনকে হত্যা করা হয়, সেই চায়ের দোকানের পাশেই দোতলায় তুহিনের অফিস। তিনি সন্ধ্যা সাগে সাতটায় দেখতে পান, কয়েকজন সন্ত্রাসী এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাড়া করছে। তখন তুহিন এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন। পরে তিনি সেখানে চায়ের দোকানে বসে ছিলেন। কিছুক্ষণ পরে সন্ত্রাসীরা এসে তুহিনকে ধাওয়া দিলে তুহিন দৌড়ে দোকানে ঢুকে পড়েন। পরে ৩ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা চা দোকানের ভেতরে ঢুকে তাঁকে টেনে বাইরে এনে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় আরও দুজন রামদা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
গাজীপুর মহানগর পলিশের (জিএমপি) বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান আজকের পত্রিকাকে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যার কারণ ও জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার, (অপরাধ উত্তর) মোঃ রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন নারী সংঘটিত বিষয় নিয়ে বাদশা নামের এক ব্যক্তি কে চার পাঁচজন সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকলে সে পালিয়ে যায়, এই দৃশ্য মোবাইলএ ভিডিও করেন সাংবাদিক তুহিন, সন্ত্রাসীদের সাথে তার বাকবিতন্ডোতা হয়, একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক তুহিন কে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। তিনি বলেন সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আমরা আসামীদের নাম জানতে পারলেও তদন্তের সার্থে এই মুহূর্তে বলা সম্ভব না। আমরা আসামীদের অচিরেই গ্রেফতার করে মূল উদ্দেশ্য বের করে আপনাদের জানাবো।