গাজীপুর প্রতিনিধি :
গাজীপুরের কাশিমপুর ভূমি অফিস যেন দালালদের ঘুস-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কোন রাখঢাক ছাড়াই চলছে ঘুসের লেনদেন। দালাল ছাড়া এখানে হয় না কাজ, এমন কি ফাইলও নড়ে না। ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের মূল্য তালিকা সম্বলিত সাইনবোর্ড ও কাগজ সরবরাহের নির্ধারিত সময়ের উল্লেখ শুধু লোক দেখানো। তালিকা মূল্যের ৫০-৬০ গুণ টাকা খরচ আর মাসের পর মাস ঘুরে ভুক্তভোগীদের কাজ আদায় করতে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে শতগুণ বেশি টাকা দিয়েও কেউ কেউ হয়রানির শিকার হন। এসব যেন দেখার কেউ নেই। সম্প্রতি সরজমিনে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে কাশিমপুর ভূমি অফিসের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, হয়রানি ও ঘুস বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র। দালাল পরিবেষ্টিত কাশিমপুর ভূমি অফিস। এ অফিসে দালালদের কাছে কোনো কাজই অসাধ্য নয়। জমির বৈধ মালিক যেই হোক, চাহিদা মতো টাকা এবং দাগ খতিয়ান নম্বর দিলেই তা হয়ে যায় অন্যের। আবার বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ঘুসের রেটে হের-ফের হলে প্রকৃত জমি মালিকদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়।নামজারির জন্য যেখানে সরকার নির্ধারিত ফি ১১৭০ টাকা। সেখানে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার নিচে কোন কাজে হাতই দেয় না কর্মচারী কিংবা দালাল।অনেক সময় আরও বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। অথচ নামজারির আবেদনের জন্য কোর্ট ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা,রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি ১ হাজার টাকা এবং প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহ বাবদ ১১০০ টাকার বাইরে আর কোনো খরচ নেই। এই ভূমি অফিসে কর্মচারীর চেয়ে বাইরের দালালের সংখ্যাই এখন বেশি। এ সব দালাল সরকারি কর্মচারীর মতো বিভিন্ন রেকর্ডপত্র নাড়াচাড়া করে। দেখে বোঝার উপায় নেই এরা বাইরের লোক। অভিযোগ রয়েছে এসব দালাল ভুল ও মিথ্যা তথ্য সংযোজন করে পুনরায় তা ঠিক করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ভূমি মালিকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। সরেজমিন ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে,কাশিমপুর ভূমি অফিসে অন্তত ৩০ জন দালাল সক্রিয় রয়েছে। এরা নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন কাশিমপুর এলাকার ভূমি সংক্রান্ত কাজকর্ম। এ সব দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। দালালের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন, মিলন, মাসুদ, কবির, আজহার, আব্দুর রহমান, আবু বাক্কারসহ আরও ৩০ জন। তবে এসব দালাল চক্রের মূলহোতা কাশিমপুর ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা লতিফ মিয়া,উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আব্দুর রহিম মিয়া,অফিস সহায়ক মোস্তফা মিয়া,অফিস সহায়ক হালিম ও অফিস সহায়ক এস আই খান। জানা যায় মোস্তফা মিয়া,হালিম,এস আই খান কাশিমপুর ভূমি অফিসে ২-৩ বছরের অধিক সময় ধরে এই অফিসে কর্মরত থাকাই দালালদের সঙ্গে তাদের একটা শক্ত সখ্যতা গড়ে উঠেছে।সুরাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম (৫৫) অভিযোগ করে জানান, কাশিমপুর ভূমি অফিসে বহিরাগত কিছু লোক এই অফিসগুলোতে দালালি করে থাকে। বর্তমানে এটা তাদের পেশায় পরিণত হয়েছে। তবে দালালরা একটি জমা খারিজে ন্যূনতম ১০-২০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে। আর কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে টাকার অঙ্ক বেড়ে যায় দুই থেকে তিন গুণ। আমার একটি ছয় শতাংশ জমির নামজারি করতে ভূমি অফিসের দালাল মিলনের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।আর দালাল না ধরলে কোন কাজই হয় না। তবে কাশিমপুর ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আব্দুর রহিম মিয়া অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, অফিসে যারা কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন তাদের সকলের সাথেই সমঝোতা করেই দালালরা কাজ করে থাকে। এ ছাড়াও তিনি কাশিমপুর ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা লতিফ মিয়ার সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। আর দালালরা অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন এই কাজগুলো তারা ঠিক করেনি। আর বাইরের লোকজন এভাবে সরকারি দপ্তরে কাজ করাও ঠিক না, এটা অন্যায় ভাবে কাজ করা হচ্ছে। তবে দালাল চক্রের সদস্যরা একটু দুষ্টু প্রকৃতির লোক। এটা আইনগত ভাবে অবৈধ! এটা করা ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে গাজীপুর টঙ্গী রাজস্ব সার্কেল এর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ সাইদুজ্জামান হিমু বলেন, অবশ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আপনি একটু সুনির্দিষ্ট ভাবে কারা এই কাজগুলো করছে, অভিযোগের ভিত্তিতে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়াও আমি আমার মত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।