বিশেষ প্রতিনিধি,মোঃ আলমগীর হোসেন
ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দের মিলনমেলা। কিন্তু সব ঈদ কি একরকম হয়? যাদের মায়া-মমতার ছায়া সরে গেছে জীবনের আকাশ থেকে, তাদের কাছে ঈদ যেন কেবলই বুকভরা দীর্ঘশ্বাস আর চোখের পানিতে ভেজা প্রার্থনা। এমনই এক বাস্তবতা নিয়ে এবার ঈদ করছেন আমরা দুই ভাই—আমি মোঃ আলমগীর হোসেন এবং আমার বড় ভাই মোঃ রুবেল ইসলাম রাজ। ঠিক ২ বছর ১১ মাস আগে, কোরবানির ঈদের মাত্র চারদিন আগে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা হারাই আমাদের মাকে। সেই ক্ষত এখনো তাজা, মনে হয় যেন গতকালই ঘটেছে। ঈদ এলেই চারপাশে খুশির ঢেউ, অথচ আমাদের ঘরে নেমে আসে নিঃশব্দের কষ্ট। মা ছাড়া ঈদের সকাল শুরু হয় চোখের পানি দিয়ে, আর শেষ হয় একরাশ শূন্যতা নিয়ে। ইসলাম ধর্মে মায়ের মর্যাদা যে কত মহান, তা আমরা জানি। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন— “মা-বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট, আর তাঁদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট।” (তিরমিজি) আমাদের মা শুধু আমাদের মা ছিলেন না, তিনি ছিলেন আশেপাশের অসহায় মানুষের সহায়—একজন মানবিক মনের মানুষ। তার অস্তিত্ব যেন ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। তার সেই স্নেহময় ছায়া আজ নেই, কিন্তু তার স্মৃতি আমাদের হৃদয়ে আজও অমলিন। এ বছর কোরবানির ঈদে আমি আমার মায়ের নামে একটি গরু কোরবানি দিচ্ছি। এই কোরবানি কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং মায়ের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রকাশ। আমি জানি, মৃত ব্যক্তির নামে সদকাহ, দোয়া ও কোরবানির নিয়ত আল্লাহর দরবারে কবুল হলে, তা তাদের রূহের জন্য প্রশান্তির কারণ হয়। আজ আমরা দুই ভাই এতিম। মা নেই বলে আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে একটা অপূর্ণতা কাজ করে। বাইরে থেকে হয়তো স্বাভাবিক মনে হয়, কিন্তু অন্তরে কেবলই বিষাদের ঢেউ। মা ছাড়া আমাদের জীবনের আনন্দগুলো রঙ হারিয়ে ফেলে। আমাদের প্রার্থনা— “হে আল্লাহ! আমাদের মাকে তুমি জান্নাতুল ফেরদাউসের সর্বোচ্চ মাকাম দান করো, তাঁর কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দাও।” এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা বিনীতভাবে সবার কাছে অনুরোধ করছি—যারা এখনো মা-বাবাকে জীবিত অবস্থায় পাশে পাচ্ছেন, তাদের সময় দিন, ভালোবাসুন, যত্ন নিন। কারণ মা-বাবা একবার চলে গেলে শুধুই ফাঁকা শূন্যতা পড়ে থাকে। ভালো থেকো আম্মু, যেখানেই থাকো… আজকের কোরবানিটি তোমার নামে, তোমাকে ছাড়া ঈদের আনন্দ যেন হারিয়ে যায় অচেনা বিষাদে।