টুটুল তালুকদার, গাজীপুর :
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সাকাশ্বর গ্রামে তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত একটি রহস্যময় প্রাচীন পাথরকে ঘিরে এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও কৌতূহল। শত শত বছর ধরে মানুষের বিশ্বাস ও সংস্কারের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকা এই পাথরটি স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘শ্রী শ্রী মাধব মন্দির’ নামে। স্থানীয়দের মতে, পাথরটির আবিষ্কার এক আশ্চর্যজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে ঘটে। জানা যায় পার্শ্ববর্তী মাধবচালা গ্রামে মাটি খুঁড়তে গিয়ে প্রথম পাথরটি আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তীতে অজানা কারণে কেউ বা কারা এটি তুরাগ নদীতে ফেলে দেয়। অনেক বছর পর, একদল জেলে মাছ ধরতে গিয়ে নদীর তলদেশ থেকে পাথরটি খুঁজে পান। এ ঘটনাকে অলৌকিক বলে বিবেচনা করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন একে পবিত্র নিদর্শন হিসেবে গ্রহণ করেন এবং একটি ঘর নির্মাণ করে সেখানে পাথরটি স্থাপন করেন।এরপর থেকেই এই স্থানটি 'শ্রী শ্রী মাধব মন্দির' নামে পরিচিতি লাভ করে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন, পাথরটির রয়েছে অলৌকিক শক্তি। অনেকে মনে করেন, এটি মনোবাসনা পূরণে সক্ষম। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা মানত নিয়ে আসেন এখানে। কেউ কেউ বলেন, স্বপ্নে এই পাথরটি দেখেছেন, আবার অনেকে এর অলৌকিক শক্তির কারণে আশীর্বাদপ্রাপ্ত কিংবা শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন বলেও দাবী করেছেন। পাথরটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানান কিংবদন্তি ও লোক কথা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একাধিকবার এটি চুরি হলেও আবার ফিরে এসেছে নিজ অবস্থানে, যা এলাকার মানুষের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে। কিছু ধর্মপ্রাণ হিন্দু বিশ্বাস করেন, পাথরটির ভেতর ‘দেবত্ব’ বিরাজ করছে।এই বিশ্বাস থেকেই প্রাচীনকাল থেকেই এটি পূজিত হয়ে আসছে।বর্তমানে এক সনাতন ধর্মাবলম্বী শ্রী অনিল চন্দ্র নামের এক ব্যক্তি এই পাথরটি দেখাশোনা করছেন। ছোট্ট একটি ঘরে পাথরটি সংরক্ষিত রয়েছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ দর্শনে আসেন, পূজা দেন, মানত করেন, প্রার্থনা করেন। তবে এই পাথরটি আসলে কত বছর পুরনো, এটি কী ধরনের খনিজ পদার্থের তৈরি, কিংবা কোথা থেকে এসেছে—তা নিয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বা প্রামাণ্য ইতিহাস পাওয়া যায়নি। প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণা বা বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ এই বিষয়ে আলোকপাত করতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। স্থানীয় প্রশাসন বা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যদি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করে, তবে হয়তো রহস্য ঘেরা এই প্রাচীন নিদর্শনের প্রকৃত ইতিহাস উন্মোচিত হতে পারে। ততদিন পর্যন্ত এটি থেকে যাবে একটি লোকবিশ্বাস, একটি অলৌকিক কাহিনির অংশ হিসেবে-যা যুগের পর যুগ ধরে মানুষের মনকে নাড়া দিয়ে চলেছে। এলাকাবাসী ও ভক্তদের দাবী, এই পাথরটি যেন যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও গবেষণার আওতায় আনা হয়, যাতে আগামী প্রজন্মও জানতে পারে এর গৌরবময় ও রহস্যময় অতীত।